শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক ব্যাহত হইতেছে
নিউজ ডেস্ক।।
দেশ বহু দিকে আগাইয়াছে, অস্বীকারের উপায় নাই। যুগের সঙ্গে তাল মিলাইয়া বাংলাদেশ ডিজিটাল হইয়াছে, দেশব্যাপী ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটিয়াছে, রাস্তাঘাট বিস্তৃত হইয়াছে। সেই সঙ্গে শিক্ষা বিস্তারের জন্য তৈরি হইয়াছে হাজার হাজার স্কুল, অসংখ্য কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষা উপকরণ পূর্বের তুলনায় হইয়াছে সহজলভ্য। কিন্তু যাহা হয় নাই, তাহা হইল আমাদের মানবিক উন্নয়ন।
গত শতাব্দীতে দেশ স্বাধীনের পূর্বে ও পরে শিক্ষকদের প্রতি শিক্ষার্থী ও সমাজের ছিল গভীর শ্রদ্ধাবোধ। বিদ্যালয়ের বাহিরেও শিক্ষক দেখিলে শিক্ষার্থীরা কোথায় লুকাইবে ভাবিয়া পাইত না। সমাজের উঁচু স্তরে এবং সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও একজন স্কুলশিক্ষককে ‘স্যার’ বলিয়া সম্মান করিতেন, চেয়ার ছাড়িয়া উঠিয়া দাঁড়াইতেন। এমনকি শিক্ষার্থী কোনো অন্যায় করিয়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধৃত হইলে শিক্ষকদের অনুরোধে ছাড়িয়া দেওয়া হইত।
কখনো-বা এলাকায় বড়ো ধরনের ঝগড়া-ফ্যাসাদে শিক্ষকদের ডাকা হইত মীমাংসার জন্য এবং তাহার সিদ্ধান্ত সকলে মাথা পাতিয়া মানিয়া লইত। তবে বিষয়টি ছিল ভাইস-ভার্সা। শিক্ষকেরাও তাহাদের চলনে, আচরণে সদা সতর্ক থাকিতেন, যাহাতে কোনোক্রমেই শিক্ষকসুলভ চরিত্র হইতে বিচ্যুতি না ঘটে। তখনকার শিক্ষকেরা অনেকটা অর্থকষ্টকে মানিয়া লইয়াই শিক্ষকতা পেশায় আসিতেন। কিন্তু কোনোরকমে সংসার চালাইয়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানে সদা মনোযোগী থাকিতেন। তবে পূর্বেও যে কদাচিত্ কোনো শিক্ষক তাহার পেশাগত দায়িত্ব থেকে বিচ্যুত হইতেন না তাহা নহে। কিন্তু তাহা ছিল বিরল ও অস্বাভাবিক ঘটনা।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে চিত্র পালটাইয়া গিয়াছে। এখন পত্রিকা খুলিলেই শিক্ষকদের ছাত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক, ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করিবার ঘটনা দেখিতে পাওয়া যায়। সকলেই নহে তাহা বলিয়া রাখা ভালো। কিন্তু সংখ্যাটি এতই বেশি যে হতাশ না হইয়া উপায় থাকে না। তেমনি আরো একটি ঘটনা প্রকাশ পাইয়াছে দৈনিক ইত্তেফাকে। জানা গিয়াছে, দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. রমজান আলীকে তাহারই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অপরাধে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হইয়াছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮তম রিজেন্ট বোর্ড সভায় এ সিদ্ধান্ত প্রকাশ করিয়াছে কর্তৃপক্ষ। আমরা জানি, যে কোনো ধরনের যৌন হয়রানির অভিযোগ দেশের প্রচলিত আইনে একটি ফৌজদারি অপরাধ হিসাবে গণ্য হইয়া থাকে।
এই ধরনের ঘটনা যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঘটে, তাহা আমাদের খুবই হতাশাগ্রস্ত করিয়া তোলে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোনো বিনোদন পার্ক অথবা বাসস্টপেজ নহে। শিক্ষকেরাও সমাজের সবচাইতে সম্মানজনক পেশায় নিয়োজিত। সেই জন্য প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্তৃপক্ষের উচিত হইবে মাঝেমধ্যে শিক্ষকদের মোটিভেট করা, যাহাতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্কের বিষয়ে তাহারা সজাগ থাকেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসি হইতে প্রায়শই শিক্ষকদের নিকট অথবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দিকনির্দেশনা কিংবা দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করিয়া পত্র প্রেরণ করা যাইতে পারে। আমাদের মনে রাখিতে হইবে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ নষ্ট হইলে দেশের অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে আর সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখা সম্ভব হইবে না।সুত্র ইত্তেফাক