লালমনিরহাটে ঘুষের টাকার জন্য শিক্ষকের বেতন বন্ধ!
মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধিঃ
ঘুষের টাকা পরিশোধ না করায় লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় এক শিক্ষকের বেতন বন্ধ ও বিদ্যালয়ে প্রবেশে বাঁধা দানের অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, কালীগঞ্জ উপজেলার দুলালী গ্রামের ভুমিহীন মাইনুল ইসলাম দিনমজুরীর আয়ে ছেলে মনোয়ারুল ইসলামকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাশ করান। এরপর আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ী ইউনিয়নের কুমড়ীরহাট এসসি দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ নেন মনোয়ারুল ইসলাম।
নিয়োগের সময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলাম কাজল ৮লাখ টাকা দাবি করলে তার গরীব ভুমিহীন বাবা ছেলের চাকুরীর জন্য একসঙ্গে ৮লাখ টাকা দিতে অপরগতা প্রকাশ করেন। ফলে প্রতি মাসে ৫হাজার টাকা হারে কিস্তিতে সমুদয় টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রুতিতে চাকুরী হয় মনোয়ারুল ইসলামের। তবে যোগদানের সময় দুইটি ফাঁকা কাগজে ও ৬টি চেকে সহকারী শিক্ষক মনোয়ারুলের স্বাক্ষর করে নেন কৌশলী প্রধান শিক্ষক।
২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ১১৫৫১০২ নম্বর ইনডেক্সে এপিও ভুক্ত হয়ে নিয়মিত বেতন ভাতা উত্তোলন করেন সহকারী শিক্ষক মনোয়ারুল ইসলাম। বেতন তুলে চুক্তি মোতাবেক প্রতি মাসে তা পরিশোধ করেন। এর মাঝে গত ডিসেম্বর মাসে চেক বন্দক রেখে বিভিন্ন সমিতি ও দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে ৫লাখ টাকা ঋণ গ্রহন করে তার ঘুষের টাকা পরিশোধ করার প্রস্তাব দেন প্রধান শিক্ষক। কিন্তু এ ঋণের কিস্তি দিতে চাকুরীর সমস্ত বেতন কর্তন হবে বলে এতে রাজি হননি শিক্ষক মনোয়ারুল ইসলাম।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলাম তার বেতন বন্ধ করেন এবং ১ জানুয়ারী শিক্ষার্থী-শিক্ষক ও অভিভাবকদের সামনে তাকে গলা ধাক্কা দিয়ে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেন বলে অভিযোগ করেন শিক্ষক মনোয়ারুল।
বিষয়টি নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা রংপুর অঞ্চলের উপ-পরিচালক (ডিডি) এবং জেলা প্রশাসক (ডিসি) সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন সহকারী শিক্ষক মনোয়ারুল ইসলাম। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রধান শিক্ষক পুরো পরিবারকে দেখে নেয়ার ও চাকুরীচ্যুত করার হুমকী দেন। জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ৭ জানুয়ারী আদিতমারী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ওই শিক্ষক।
সহকারী শিক্ষক মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, কিস্তিতে টাকা দিতে চেয়েছি। প্রধান শিক্ষক ঋণ নিয়ে একই সঙ্গে পরিশোধের জন্য চাপ দেন। ঋণের কিস্তি দিতে পুরো বেতন চলে যাবে। তাই ঋণ করে দেইনি। এ জন্য প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলাম ক্ষমতার অপব্যবহার করে বেতন বন্ধ করে বিদ্যালয় থেকে বের করে দিয়েছেন। বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেয়ায় এখন স্বাক্ষর নেয়া কাগজটিতে চাকুরীচ্যুত করার হুমকী দিচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়টির একাধিক শিক্ষক বলেন, প্রধান শিক্ষক পেশী শক্তিতে একক সিদ্ধান্তে প্রতিষ্ঠানটিকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত করেছেন। প্রতিবাদ করলে চাকুরীচ্যুত করার হুমকী দেন। মেধাবী শিক্ষক মনোয়ারুল অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় তাকে চাকুরীচ্যুত করার ষড়যন্ত্র করছেন প্রধান শিক্ষক। তারা উর্দ্ধতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
কুমড়ীরহাট এসসি দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলাম ঘুষের টাকার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, যেহেতু অভিযোগ করেছে, সেহেতু তদন্ত কর্মকর্তাকে লিখিত বক্তব্য দেয়া হবে। গনমাধ্যমে তথ্য দিতে বাধ্য নই। যা লেখার লিখে যান।
আদিতমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আরিফ মাহফুজ বলেন, উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে দায়েরকৃত অভিযোগটি আমাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। দ্রুত তদন্ত করে প্রতিবেদন পাঠানো হবে।
আদিতমারী থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে বলা হয়েছে। নিষ্পত্তি না হলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।