ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ইতিহাস
ব্যাংক’ শব্দটি মাথায় আসলেই লেনদেন সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি ব্যাপার চলে আসবে। বিশেষ করে ঋণ সংক্রান্ত ব্যাপার। ব্যবসা করতে ইচ্ছুক কিংবা কোনো উদ্যোক্তার জন্য আস্থার এক জায়গা ব্যাংক। যেখান থেকে প্রয়োজন মতো টাকার যোগান পাওয়া যাবে। বিনিময়ে ঋণ গ্রহিতাকে গুনতে হবে সুদ। কিছু মানুষের হিসেব আবার ভিন্ন। নিজের অর্জিত টাকার উদ্বিত্ত অংশকে অধিক টাকায় রূপান্তর করতে যারা ব্যাংকে টাকা জমা রেখেছিলেন তারা পাবেন সুদের অংশ। অর্থ্যাৎ, মানুষের উপরি টাকাকে সুদের বিনিময়ে উদ্যোক্তাদের হাতে তুলে দিয়ে মুনাফা অর্জন করা-ই ব্যাংকের মূল কাজ। যদিও সময়ের সাথে সাথে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু মুনাফা অর্জনের যে মূল বিষয়; সেটি আগের মতোই রয়ে গেছে।
প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের মধ্যে বিনিময় সংক্রান্ত বিষয়টি ছিলো। কিংবা উদ্বৃত্ত অর্থকে কাজে লাগিয়ে মুনাফা অর্জনের ব্যাপারটি ছিলো। তাছাড়া এক ব্যবসায়ী আরেক ব্যবসায়ীকে আর্থিক সাহায্য করার বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। সমাজের ধনিক শ্রেণী তাদের আয়ের অতিরিক্ত অংশ পাতিলে পুরে মাটিতে পুঁতে রাখতো। এখনকার মতো আধুনিক ব্যাংকিং সম্পর্কে ধারণা না থাকলেও ব্যাংকিং সম্পর্কে তাদের ধারণা ছিলো। কেননা, উদ্বৃত্ত অর্থ কাউকে সাময়িক সময়ের জন্য দেয়া হলে তার বিনিময়ে পরিশোধের সময় বাড়তি টাকা নেয়া হতো। ব্যাংকের ভাষার যাকে সুদ বলা হয়। অর্থ্যাৎ, পুরোদস্তর ব্যাংকিং প্রথা না থাকলেও ব্যাংকের আদলে লেনদেন সম্পর্কে অবহিত ছিলো।
ব্যাংকের প্রকৃত ইতিহাস নিয়ে মতানৈক্য আছে। খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ এ প্রোটোটাইপ ব্যাংকের যাত্রা শুরু হয় আসিরিয়া এবং ব্যাবিলনীয়ায়। পরবর্তীতে প্রাচীন গ্রিস ও রোমান সময় মন্দিরভিত্তিক ঋণ তৈরি। আমানত গ্রহণ ও অর্থ পরিবর্তনের কাজও করতো এই ব্যাংক।
তবে ধারণা করা হয় যে, ব্যাংকিং ব্যবস্থার সূচনা ঘটে মধ্যযুগ ও রেনেসাঁ যুগে। খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০০ অব্দ থেকে ৪০০ সাল পর্যন্ত প্রাচীন সিন্ধু, গ্রিক, রোমান, ব্যাবিলন ও চৈনিক সভ্যতায় ব্যাংকিংয়ের ইতিহাস পাওয়া যায়। প্রাচীন গ্রিক, ব্যাবিলন ও মিশরীয় সভ্যতায় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও উপাসানলয়কে কেন্দ্র করে ব্যাংক ব্যাবসা গড়ে উঠেছিলো। এই ব্যাংকিং উপাসনালয় ব্যাংকিং নামে পরিচিত ছিলো। এছাড়া খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০ সালে চীনে শান্সী ব্যাংক গড়ে উঠার প্রমাণও পাওয়া যায়।
সনাতন পদ্ধতির ব্যাংকিং বিলুপ্ত হতে শুরু করে ৪০০ থেকে ১৪০০ সালের মধ্যকার সময়ে। হাজার বছরের এই সময়টিকে ব্যাংক ব্যবস্থার মধ্যযুগ বলা হয়। এ সময়ে ব্যাংক ব্যবস্থা উন্নত হতে থাকে। ইউরোপের দেশগুলোতে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটায় ব্যাংকিং ব্যবস্থারও উন্নয়ন ঘটে। সপ্তম শতাব্দীতে রোম শহরে ইহুদি ব্যবসায়ী ও ধনকুবেরদের যৌথ উদ্যোগে ব্যাংক ব্যবস্থার প্রবর্তন হয়। ১১৫৭ সালে প্রথম ব্যাংকের দেখা মিলে। ভেনিস সরকারের প্রচেষ্টায় ‘ব্যাংক অব ভেনিস’ প্রতিষ্ঠিত হয়। যেটি পৃথিবীর প্রথম ব্যাংক হিসেবে পরিচিত।
ব্যাংকের আধুনিক যুগের সূচনা হয় ১৪০০ সালে। ১৪০১ সালে ‘ব্যাংক অব বার্সিলোনা’ প্রতিষ্ঠিত হবার পর থেকে এর কার্যাবলী বিস্তৃত হতে থাকে। এই ব্যাংককে বিশ্বের প্রথম আধুনিক ব্যাংকের মর্যাদা দেয়া হয়। ধীরে ধীরে ব্যাংক অব জেনোয়া, ব্যাংক অব আমস্টার্ডাম, ব্যাংক অব হামবুর্গ প্রতিষ্ঠিত হবার পর ব্যাংকের কার্যক্রম আধুনিক হতে শুরু করে। ১৬৫৬ সালে ব্যাংক পায় তার বাণিজ্যিক সনদ! বিশ্বের প্রথম বাণিজ্যিক সনদপ্রাপ্ত ব্যাংক হিসেবে যাত্রা শুরু করে ‘ব্যাংক অব সুইডেন’। ১৬৯৪ সালে ব্যাংকিং খাতকে আরোও আধুুনিক রূপ দেয় ইংল্যান্ড। বিশ্বের প্রথম কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে উত্থান হয় ব্যাংক অব ইংল্যান্ড।
লেখক: মঞ্জুর দেওয়ান