বেসরকারী শিক্ষকদের ডিজিটালের ছোঁয়া লাগবে কবে?
বিন-ই-আমিনঃঃ
ডিজিটালের ছোঁয়ায় দেশ যখন সামনে এগিয়ে যাচ্ছে, বেসরকারি শিক্ষকরা তখনও পিছিয়ে। শিক্ষকদের এই পিছিয়ে থাকার জন্য নিজেরা মোটেও দায়ী নন। তাদের প্রতি সরকারের উদাসীনতাই অনেকাংশে দায়ী। আজও ডিজিটাল বাংলাদেশের সকল সুবিধা পাচ্ছেনা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক কর্মচারীরা। তাদের বেতনকে বলা হয় অনুদান। আবার বেতন পাস হয় সনাতন পদ্ধতিতে। সংশ্লিষ্ট ডিজি অফিস থেকে এমপিও সিট সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে না আসলে মাসিক বেতন উত্তোলনের সুযোগ নেই বে-শিক্ষকদের। প্রতিমাসে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বেতন পাস করালে এবং পাসকৃত বেতন ও বিল বিবরণীর সাথে এমপিও সিট ব্যাংকে জমা দিলেই শেষ নয়। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সুবিধামতো তারিখ দেন। তার পরই বেতন উত্তোলন করতে পারেন একজন শিক্ষক কর্মচারী। সরকারি কোষাগার থেকে বেতন নেওয়া আর কোনো পেশায় এতো বিড়ম্বনা আছে বলে আমার জানা নেই। গ্রামের স্কুল,মাদরাসা বা অন্য কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের বেতন তুলতে হয় জেলা শহরের ব্যাংক থেকে। যেসব উপজেলা শহরে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের শাখা আছে তাদের বেতন তুলতে বিড়ম্বনা একটু কম হয়। আবার একই দিনে অনেক প্রতিষ্ঠানের বেতন উত্তোলনের সিডিউল থাকলে ভোগান্তির শেষ থাকেনা। সারাদিন লাইনে দাঁড়িয়ে,ব্যাংকের পিওনকেও স্যার বলে, মন গলিয়ে কাজ হাসিল করতে হয়। দেরিতে এমপিও ছাড় হওয়ায় বেতনের চেক বিক্রি করার মতো ঘটনাও ঘটে বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীদের বেলায়। জরুরি প্রয়োজনে প্রতিমাসের বেতনের চেক ৩-৫ শত টাকা কমে অন্য লোকের কাছে বিক্রি করার ঘটনাও আছে বেসরকারি শিক্ষকদের । বাস্তবতা হলো যারা এতো বিড়ম্বনার স্বীকার তাদের সাহায্য ছাড়া সরকারি কোনো অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়না। সকল জাতীয় অনুষ্ঠানগুলো ছাড়াও সারা বছর কোনো না কোনো অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা লাগে বেসরকারি শিক্ষক- শিক্ষার্থীদের। অথচ তাদের আর্থিক সুযোগ সুবিধা প্রদানে সব সরকারই উদাসীন। নিয়োগের বেলায়ও আছে হ-য-ব-র-ল অবস্থা। শিক্ষক নিয়োগ এনটিআরসিএ'র মাধ্যমে করে নিয়োগের ক্ষেত্রে ঘুষ বাণিজ্য,স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও দূর্ণীতিকে বিদায় জানালেও প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সহকারী এবং অফিস সহকারী নিয়োগের মাধ্যমে আবার সেই পূর্বের অবস্থাকে সমর্থন করা হচ্ছে। সৎ,দক্ষ ও নীতিবান প্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়োগের জন্য এনটিআরসিএ বা তার আদলে কমিশন গঠন অথবা পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগের কোনো বিকল্প নেই। প্রতিষ্ঠান প্রধান ও অফিস সহকারী নিয়োগে টাকার বাণিজ্য হলে তাদের মাধ্যমে সততা আশা করা কঠিন। বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কমিটির যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন আছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির শিক্ষাগত যোগ্যতা ডিগ্রি পাস নির্ধারন করেছে সরকার। মাদরাসা অধিদপ্তরও একই নিয়মে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করেছে। নিঃসন্দেহে সিদ্ধান্তটি যোগোপোযোগি। এখন অপেক্ষা মাধ্যমিক পর্যায়ে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক হলে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বেলায় এ সিদ্ধান্ত অনেক আগেই নেওয়া উচিত ছিল।
একজন পরীক্ষক বা নিরীক্ষক হিসেবে পাবলিক পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের পারিশ্রমিক পাওয়ায় বিড়ম্বনার স্বীকার আরো বেশি। খাতা মূল্যায়ন বা নিরীক্ষণের কমপক্ষে এক বছর পর পরীক্ষক বা নিরীক্ষার মূল্যায়নের টাকা হাতে পান বেসরকারি শিক্ষকরা। কখনো কখনো ২/৩ বছর পরও পরীক্ষকদের পারিশ্রমিক প্রদান করেছিল সংশ্লিষ্ট শিক্ষাবোর্ড । শিক্ষক অবসরে গেলে যেমন ৩-৪ বছর পর এককালীন অবসর সুবিধা পেয়ে থাকেন,খাতা মূল্যায়নের পারিশ্রমিকের বেলায়ও ঐ রকম সমস্যা । একবিংশ শতাব্দীতে এসেও আশির দশকের সেই সনাতন পদ্ধতিতে শিক্ষকদের মাসিক বেতন উত্তোলন ও পাবলিক পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নের পারিশ্রমিক পাওয়ার করুন কাহিনী আর কোনো দেশে আছে বলে মনে হয়না। যেখানে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন ভাতা নিয়েও এতো গড়িমসি হয়না। সরকারি কোষাগার থেকে বেতন নেওয়া অন্য কেউ এতো অবহেলিত আছে বলে আমার জানা নেই। শিক্ষাগত যোগ্যতাও অন্য কোনো সেক্টরের চাকরিজীবদের চেয়ে কম নেই বেসরকারী শিক্ষকদের। এ যুগে এসেও বেসরকারি শিক্ষকদের সাথে এরকম আচরণ সত্যিই হতাশার ও দুঃখজনক। বর্তমান সরকার শিক্ষা ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন,পরিবর্ধন,পরিমার্জন ও উন্নতি সাধন করেছেন। যা অতীতের কোনো সরকারের পক্ষে সম্ভব হয়নি। মানসম্মত শিক্ষা প্রদান করতে শিক্ষকদের সুযোগ সুবিধা প্রদানের যেমন বিকল্প নেই,তেমনি শিক্ষকদের জরুরি প্রয়োজনগুলো পুরন করাও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জন্য জরুরি। অবহেলিত বেসরকারি শিক্ষকদের দুরবস্থার অবসান হওয়া জরুরী। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে পেজে লাইক দিয়ে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়।
সর্বশেষ
জনপ্রিয়