পাঁচ বছরে প্রায় ৫১ হাজার পরীক্ষার্থীর চাকরির সুপারিশ
নিউজ ডেস্ক।।
গত পাঁচ বছরে ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পদে প্রায় ৫১ হাজার মেধাবীকে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের সুপারিশ করেছে সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি)। এর মধ্যে গত ৩৫তম বিসিএস থেকে ৩৯তম বিসিএস পরীক্ষা পর্যন্ত ক্যাডার পদে ১৪ হাজার ৮১৩ জনকে এবং তিনটি বিসিএস হতে ৫ হাজার ০৪৬ জনকে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। বিসিএস ছাড়াও শুধু নন-ক্যাডারের পৃথক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গত পাঁচ বছরে মোট ৩০ হাজার ৯৭৮ জনকে বিভিন্ন নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের সুপারিশ করেছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। অথচ গত ২০০১ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত পিএসসিতে নিয়োগের সুপারিশ ছিল মাত্র সাড়ে ১৬ হাজার। পাঁচ বছরে রেকর্ড সংখ্যক মেধাবীকে স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ দিয়ে পরীক্ষার্থীর আস্থা ও মর্যাদার প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে পিএসসি। প্রশ্নফাঁস এবং দলীয়করণের লেজুড়বৃত্তি থেকে বেরিয়ে এসেছে পিএসসি। আর এটি সম্ভব হয়েছে পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিকের কারণেই। আজ চেয়ারম্যান পদ থেকে বিদায় নিচ্ছেন তিনি।
ড. মোহাম্মদ সাদিক ২০১৬ সালের ২ মে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করেন। এর পূর্বে তিনি গত ৩ নভেম্বর ২০১৪ থেকে এ কমিশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। সিভিল সার্ভিসে বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী ড. সাদিক সরকারের শিক্ষা সচিব ও বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এদিকে বুধবার নতুন চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগ পেয়েছেন সাবেক সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন।
কীভাবে এমন মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান তৈরি করল প্রতিষ্ঠানটি তারই রহস্য জানালেন যার নেতৃত্বে এ পরিবর্তন সেই চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক। বিদায়ের আগমুহূর্তে ইত্তেফাকের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত চাওয়া ও সরকারের সহযোগিতায় পিএসসিকে পরীক্ষা ও নিয়োগে সবচেয়ে বড় আশ্রয়স্থল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, পিএসসির সাংবিধানিক কাজে সরকার কখনো হস্তক্ষেপ করেনি বরং বস্তুনিষ্ঠ ও সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে সরকার সবসময় সহযোগিতা করেছে। আমরা এখানে সম্পূূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পেরেছি। ফলশ্রুতিতে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনা গেছে এবং যোগ্যরা চাকরি পাচ্ছেন। স্বচ্ছতার কারণে পিএসসির প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বেড়েছে।
ড. সাদিক বলছিলেন, ইতিপূর্বে বিভিন্ন সময়ে বিসিএসসহ অন্যান্য নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হতো। আমরা প্রশ্ন ফাঁস শূন্যের কোঠায় নামিয়ে এনেছি। পরীক্ষার ঠিক ৩০ মিনিট পূর্বে লটারির মাধ্যমে প্রশ্নপত্রের সেট নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া মৌখিক পরীক্ষার দিন সকালে বোর্ড নির্ধারণ করা হয়। এতে কে কোন বোর্ডে পরীক্ষা দেবে তা জানা যায় না। এভাবে পরীক্ষার প্রতিটি স্তরে স্বচ্ছতা আনা সম্ভব হয়েছে। সরকার ২০১০ সালের নন-ক্যাডার নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়নের ফলে বিসিএস হতে উত্তীর্ণ কিন্তু পদ স্বল্পতার কারণে যাদের ক্যাডার পদে সুপারিশ করা যায়নি তাদের বেশির ভাগ প্রার্থীকে আমরা কোনো না কোনো চাকরিতে সুপারিশ করতে পেরেছি। মূলত এসব পদক্ষেপের কারণে পিএসসি তার মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান ধরে রাখতে পেরেছে বলে আমি মনে করি।
ড. সাদিক বলেন, পিএসসির কাজে গতি আনতে জনবল বাড়ানো জরুরি। সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন দেখছে। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে যারা কাজ করবেন তাদের আমরা নিয়োগ করে থাকি। এজন্য পিএসসিকে আরো আধুনিক ও যুগোপযোগী করা দরকার। সে কারণে পিএসসির আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। পিএসসিকে আর্থিক স্বাধীনতা দিতে হবে। তিনি বলেন, পিএসসিকে তার সাংবিধানিক মর্যাদা ধরে রাখতে স্বচ্ছতার কোনো বিকল্প নেই।
পিএসসির নতুন চেয়ারম্যান:পিএসসির নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সাবেক সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন। বুধবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চুক্তি ও বৈদেশিক নিয়োগ শাখার এক প্রজ্ঞাপনে এ নিয়োগের আদেশ জারি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সংবিধানের ১৩৮ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি চেয়ারম্যান হিসেবে মো. সোহরাব হোসাইনকে নিয়োগ দিয়েছে। বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক আজ অবসরে যাবেন। আগামী রবিবার নতুন চেয়ারম্যান দায়িত্বগ্রহণ করতে পারেন।
সাংবিধানিক পদ পিএসসির চেয়ারম্যান হিসেবে মো. সোহরাব হোসাইন শিগিগরই প্রধান বিচারপতির কাছে শপথ নিবেন। নিয়োগের তারিখ থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর অথবা বয়স ৬৫ বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত (যেটি আগে আসে) তিনি এ পদে দায়িত্ব পালন করবেন। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১৯৮৪ ব্যাচের কর্মকর্তা মোহাম্মদ মো. সোহরাব হোসাইন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সরকারের বিভিন্ন পদে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে, তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিসিএস প্রশাসন একাডেমির রেক্টরসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।