জেলায় খেলাধুলা ও সংস্কৃতিতে এগিয়ে গাংনীর চিৎলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়
রফিকুল আলম বকুল, মেহেরপুর প্রতিনিধি।।
মেহেরপুরের বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গণে অবদান রেখেছে তার মধ্যে চিৎলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় অন্যতম। নান্দনিক সৌন্দর্যে ভরা এ বিদ্যালয়টি ইতোমধ্যে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আস্থার প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে তেমনি প্রশাসনিকভাবেও নজর কেড়েছে। এই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক ছিলেন মরহুম গোলাম আম্বিয়া যিনি ঐ অঞ্চলের একজন দক্ষ ইংরেজী শিক্ষক, সংগঠক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ।
তিনি শিক্ষার পাশাপাশি ছিলেন আধুনিক সংস্কৃতিমনা ব্যক্তি । একজন আপাতমস্তক শিক্ষক যার ধ্যান জ্ঞান ছিল শুধুই এই স্কুল। এলাকার ছাত্রছাত্রীদের কথা বিবেচনা করে মানুষকে শিক্ষিত করার অভিপ্রায়ে নিজে এবং গ্রামের মানুষকে সাথে করে বাঁশসহ বিভিন্ন সরন্জাম সংগ্রহ করে এই স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যাপক অবদান রাখেন। তিনি নিজের সংসারে সময় না দিয়ে সারাদিন স্কুলের পিছনে সময় দিতেন । সম্পুর্ন একজন সামাজিক মানুষ ছিলেন তিনি। এলাকায় একজন সদালাপী, সৎ, উদার সংস্কৃতিমনা ও ভাল মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন ।
১৯৬৮ সালে মেহেরপুর কুষ্টিয়া মহাসড়কে বাশবাড়িয়া বাজার থেকে তিন কিলোমিটার দক্ষিনে চিৎলা গ্রামে তিন একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয় এ বিদ্যালয়টি । বিদ্যালয়টিতে রয়েছে চারশত এর অধিক শিক্ষার্থী। ১৬ জন এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারী দিয়ে চলছে এ প্রতিষ্ঠানটি। শিক্ষাদানের রয়েছে অভিজ্ঞ শিক্ষক । সামনে রয়েছে বিশাল খেলার মাঠ । যেখান থেকে জাতীয় দিবস, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও খেলাধুলা পরিচালনা করা হয় । আছে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযোদ্ধা কর্নার । ভাষা শহীদদের সম্মান জানানোর জন্য আছে শহীদ মিনার । প্রতিষ্ঠানে রয়েছে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব ।
যেখানে রয়েছে ১৩ টি কম্পিউটার ও দুটি ল্যাপটপ, একটি প্রজেক্টর রয়েছে। এই ল্যাব থেকে ছাত্রছাত্রীদের সব ধরনের আইসিটি জ্ঞানেের ব্যবস্থা করা হয় । পড়াশোনার জন্য রয়েছে আধুনিক মানের লাইব্রেরী। শিক্ষার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক ও খেলাধুলায় কৃতিত্বের সাক্ষর রেখেছে বিদ্যালয়টি। ছেলেদের ও মেয়েদের বিভিন্ন খেলায় উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স আপ হওয়ার গৌরব অর্জন করে। জাতীয় সংগীত প্রতিযোগীতায় একবার জাতীয় পর্যায়ে যাওয়ার গৌরব অর্জন করে প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা । রয়েছে সুসজ্জিত স্কাউটস টীম। বিশেষ করে জাতীয় দিবসে ছেলে- মেয়েদের মনোমুগ্ধকর শারীরিক কসরত দেখে অতিথিরা অভিভূত হন।
প্রধান শিক্ষক মোঃ আক্কাছ আলী জানান, এই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক এর যোগ্য উত্তরসুরী এই স্কুলের বর্তমান সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্রীর ফটোগ্রফার জনাব সাইফুল ইসলাম কল্লোাল এর দিক নির্দেশনায় ও সহযোগিতায় আমরা সবাই শিক্ষা, সংস্কৃতি ও খেলাধুলায় জেলার শীর্ষে অবস্থান করতে চাই । তিনি আরও বলেন, সবার সহযোগীতায় একটি আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তিনি চেষ্টা করে যাবেন। শিক্ষক কর্মচারীদের উদ্বুদ্ধ করণ ছাড়াও বিদ্যালয়ের পরিবেশ ঠিক রাখতে সবার আগে তিনি উপস্থিত হন। বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ শিক্ষক ও অভিভাবকদের সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠানের মান উন্নয়নে কাজ করা হচ্ছে। যাতে এ প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষা, সংস্কৃতি ও খেলাধুলায় জেলায় শীর্ষ অবস্থানে থাকতে পারে ।
বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের বর্তমান সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্রীর ব্যক্তিগত প্রেস উইং এর সদস্য সাইফুল ইসলাম কল্লোল জানান, অর্থের বিনিময়ে কোন শিক্ষক নিয়োগ না দিয়ে যদি মেধাবীদেরকে নিয়োগ দেয়া যায় তাহলে ওই শিক্ষকের কাছ থেকে ভাল কিছু আশা করা সম্ভব। শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগে স্বচ্ছতার কারণে ও শিক্ষক কর্মচারীদের টীম ওয়ার্কের কারণে প্রতিষ্ঠানটি আজ সবার কাছে পরিচিতি পেয়েছে।
তিনি আরো বলেন আমি সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর স্কুলের বাউন্ডারীওয়াল , বিভিন্ন অবকাঠামো ও , চারতলা ভবন তৈরীর জন্য চেষ্টা করেছি যার ফলশ্রতিতে ঐ সকল কাজগুলো সম্পুর্ন হয়েছেএবং চারতলা একাডেমিক ভবন নির্মানাধীন আছে। শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের আইসিটি জ্ঞানের প্রসার ঘটবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন । তিনি বলেন করোনা পরিস্থিতিতে স্কুলের শিক্ষকদের বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ করে এলাকার বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ায় দিক নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে এই কার্যক্রম বেশ সাড়া ফেলেছে ।
এলাকার অভিভাবক ও সমাজের বিভিন্ন শ্রেনীপেশার মানুষ এই কার্যক্রমে খুব খুশী । ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষকদের এই কার্যক্রমকে সুনজরে দেখছে । বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির বর্তমা যা যা করনীয় ও যে কোন সহযোগিতার জন্য আমি প্রস্তুত এবং সে ভাবেই কাজ করে যাচ্ছি । বিদ্যালয়টিকে ভবিষ্যতে ভাল অবস্থানে নেয়ার জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি ।
সবমিলিয়ে পাড়া গ্রামের এই বিদ্যালয়টি শিক্ষা, সংস্কৃতি ও খেলাধুলায় উপজেলা বা জেলা পর্যায়ে ভাল অবস্থানে থাকবে বলে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিদের আশাবাদ ।
চিৎলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও গাংনী মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পারভেজ সাজ্জাদ রাজা বলেন, এই স্কুলের নিয়ম শৃঙ্খলা ও শিক্ষকদের আন্তরিকতার কারণে শিক্ষার্থীরা কৃতিত্বের সাথে পাশ করে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সুনামের সাথে কাজ করছেন।
তিনি আরও বলেন, আমার আব্বা ধানখোলা ইউনিয়ন পরিষদের বারবার নির্বাচিত সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম সরোয়ার, আমার চাচা সাবেক প্রধান শিক্ষক মরহুম গোলাম আম্বিয়া, কসের আলী, ছাকেমউদ্দীন, নাদের আলী, আখের মন্ডল তুষ্ট ডাক্তার আজগর আলী মুসতাক আহমেদসহ চিৎলা গ্রামের এবং পার্শ্ববতী বিভিন্ন গ্রামের মানুষের সহযোগিতায় এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত। তিনি বলেন আমার আব্বা দীর্ঘদিন এই স্কুলের পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন এবং স্কুলের উন্নয়নে তার অবদান অনস্বীকার্য ।