জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৯ লাখ শিক্ষার্থীর স্থগিত পরীক্ষার কী হবে
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
করোনা মহামারির কারণে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি), জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা বাতিল হয়েছে। এইচএসসির মতো গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক পরীক্ষাও না নিয়ে ফল ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ৬৫ লাখ শিক্ষার্থী বিকল্প মূল্যায়নে উত্তীর্ণ হবেন। এখন প্রশ্ন উঠেছে, জাতীয় বিশ্ব-বিদ্যালয়ের স্থগিত পরীক্ষাগুলোর কী হবে। এই তিনটি পরীক্ষার আদলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়েও নতুন করে ভাবার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কোর্সে ২৯ লাখ ১০ হাজারের মতো শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সরকারি ও বেসরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের চাকরির বয়স নিয়েও শঙ্কিত। এ কারণেই বিকল্প মূল্যায়ন পদ্ধতিতে শিক্ষাজীবন এগিয়ে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা মার্চেই শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলতি বছরের ১৭ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বেশির ভাগ বিষয়ের পরীক্ষা শেষ হলেও করোনা মহামারির কারণে দুটি থেকে পাঁচটি বিষয়ের পরীক্ষা আটকে যায়। তখন থেকেই অপেক্ষায় রয়েছেন তারা; কবে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর কেটে গেছে ৯ থেকে ১০ মাস। অনেকের মধ্যেই উত্কণ্ঠা আর হতাশা দানা বাঁধছে; কবে শেষ হবে বাকি পরীক্ষাগুলো। আর কবে হবে পরীক্ষার ফলাফল। কারণ চতুর্থ বর্ষ শেষ না হলে মিলবে না সনদ। আর সনদ না মিললে চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণও করা হবে না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষার্থী রফিকুল আলম। তিনি বলেন, চারটি পরীক্ষা দিলেই শেষ হতো শিক্ষাজীবন। কিন্তু করোনার কারণে আটকে আছি। করোনার মধ্যেও অনেক সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। ফল প্রকাশ হলে চাকরির জন্য চেষ্টা করার সুযোগ পেতাম কিন্তু পারছি না। আবেদনের বয়স আর কতদিন থাকবে। চাকরির প্রবেশের বয়স সরকার ছয় মাস বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু সে সময়ও পেরিয়ে যাচ্ছে। রফিকুলের মতে, প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় বর্ষের ফল মূল্যায়ন করে চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষার ফল ঘোষণা করতে পারে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে অন্তত ৪ লাখ শিক্ষার্থী উপকৃত হতো।
স্বয়ংক্রিয় পাশের দাবিতে সম্প্রতি গাজীপুরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে বিভিন্ন কলেজের বিএ (সম্মান) ও চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষার্থীরা এই দাবি জানান।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি পাশ কোর্স দ্বিতীয় বর্ষ ও তৃতীয় বর্ষ, মাস্টার্স ফাইনাল এপ্রিলের মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা সংক্রমণের কারণে এসব পরীক্ষা স্থগিত রাখা হয়। ডিগ্রি পাস কোর্সে প্রতিটি বর্ষে ৩৪টি পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। নজরুল আমিন নামে এক শিক্ষক বলেন, এসব স্তুরের পরীক্ষার ফল দিয়ে পরবর্তী স্তরে উত্তীর্ণের সুযোগ দেওয়া উচিত। অনলাইনের কার্যকর কোনো লেখাপড়া হচ্ছে না। আগস্ট পর্যন্ত মাস্টার্স প্রিলিমিনারি, অনার্স প্রথম বর্ষ পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। প্রতিটি বর্ষের ৩১টি বিষয়ে পরীক্ষা রয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে এই পরীক্ষার সূচিও প্রস্তুত করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এসব স্তুরের শিক্ষার্থীরাও তাদের পরবর্তী স্তরে উত্তীর্ণের দাবি জানিয়েছেন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের সেশনজট কমানোর জন্য ২০১৪ সালে এক বার ক্রাশ প্রোগ্রাম নেওয়া হয়। এ কারণে শিক্ষাবর্ষ এক বছরের স্থলে আট মাস হয়েছিল। পাঠদান ও শিক্ষাগ্রহণ বড় বিষয় নয়, পরীক্ষা নিয়ে সেশনজট কমানোই ছিল ঐ প্রোগ্রামের উদ্দেশ্য। কিন্তু ঐ প্রোগ্রামে গলদঘর্ম হতে হয়েছিল শিক্ষার্থীদের।
একের পর এক পরীক্ষা স্থগিত হচ্ছে। সময় পেরিয়ে গেলেও পরীক্ষাসূচি করা যাচ্ছে না। ধারণা করা হচ্ছে—জানুয়ারিতেও যদি শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা যায়, তাহলেও এই পরীক্ষাজট কমাতে অন্তত তিন বছর সময় লেগে যাবে।