ছুটিতে যেভাবে সময় কাটাচ্ছেন শিক্ষকরা
এ এইচ এম সায়েদুজ্জামান।।
সকাল ৯ টা থেকে ৪ টা পর্যন্ত চলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান । এই সময়ের মধ্যে শিক্ষকরা থাকেন মহাব্যস্ত-এমন ব্যস্ততা এখন আর নেই। করোনা ভাইরাসের বৈশ্বিক প্রাদুর্ভাবের মধ্যে শিক্ষকরা বই পড়ে কিংবা জাতীয়-আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের নিউজ দেখে সময় কাটাচ্ছেন।
সারাদেশের কয়েকজন শিক্ষকের সাথে কথা বলে এমন তথ্য জানা যায়।
১৭ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত ছুটিতে ছিল সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ছুটি ঘোষণা করেন ৯ এপ্রিল পর্যন্ত।
সাধারণ ছুটিতে কীভাবে সময় কাটছে এমন প্রশ্নে কুমিল্লার বাতাকান্দি সরকার সাহেব আলি আবুল হোসেন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মুহাম্মদ শাহজামান শুভ বলেন, এই পরিস্থিতিতে বাসায় অনেকগুলো বই নিয়ে এসেছি। সেগুলো পড়ে শেষ করছি। বেশির ভাগ সময় বই পড়ে কেটে যায় সময়। প্রতিদিনের সংবাদ পত্র ও টিভি নিউজ দেখি নিয়মিত।
বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, নিম্ন আয়ের মানুষেরা খুবই বিপদে আছে। এখন বৃত্তবানরা এগিয়ে আসতে হবে। আমি আমার এলাকায় শিক্ষকদের খেটে খাওয়া মানুষের বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়াতে আহবান করছি।
রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষিকা শ্যামলী হোসেন বলেন- করোনা সম্পর্কে দেয়া বিধি নিষেধ মেনে চলছি । গত ২১/০৩/২০২০ এ ছেলে এসেছে কানাডা থেকে ।
ওকে হোম কোয়ারেনটাইন দিয়েছে ০৪/০৪/২০২০ পর্যন্ত । ওর সাথে আমরাও পরিবারের সবাই হোম কোয়ারেনটাইনেই আছি । একদমই কেও বের হচ্ছি না । ছেলেও পূরোপূরি নিয়ম মেনে ওর ঘরেই আছে । নিজের পড়ালেখা করছে । আমি বই পড়ছি..গান শুনছি...আত্বীয় বন্ধু পরিজনের খোঁজখবর রাখছি..নামাজ দোয়াকালাম পড়ছি । টেলিভিশনে প্রতিদিনের করোনা সম্পর্কে আপডেট শুনছি।
নলছিটি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ, নলছিটি, ঝালকাঠি স্কুলের শিক্ষক বনি আমিন বলেন- একটু আগে কর্মস্থল থেকে আসলাম। নিম্নমধ্যবিত্ত যারা কোথাও কোনো সাহায্যের জন্য হাত পাততে পারেনা ইজ্জতের ভয়ে কিন্তু পেটে ক্ষুধা। বেঁচে থাকার আকুলতা সবার মধ্যে। এরকম লোকদের তালিকা করে আসলাম ১০ কেজি করে চাল দিব বলে। বাকি সময় অনলাইনে কাটাই।
কথা হয় খায়রুল্লাহ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় গফরগাঁও, ময়মনসিংহ এর সহকারি শিক্ষক মো. নূরুজ্জামান এর সাথে । তিনি বলেন- বন্ধের এই সময় আমি ময়মনসিংহ অনলাইন স্কুল নামে ফেইজবুকে অনলাইনে বিভিন্ন বিষয়ে লা্ইভ ক্লাসে যুক্ত থাকছি। মুক্ত পাঠে বিভিন্ন বিষয়ে কোর্স করছি, শিক্ষক বাতায়নে কনটেন্ট আপলোড করছি।
তাছাড়া গফরগাঁও উপজেলা আইসিটি শিক্ষক ফোরামের উদ্যোগে এলাকার রিক্সাচালক, হকার, রাজমিস্ত্রীসহ অসহায়দের সাহাযার্থে তালিকা তৈরি করেছি। এখন আইসিটি শিক্ষক ফোরামের উদ্যোগে ফান্ড গঠন করে ঐসব ব্যক্তিদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে।
কলারোয়া, সাতক্ষীরার কলারোয়া বেত্রবতী আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মোঃ রাশেদুল হাসান কামরুল বলেন-জাতির এই কঠিন ক্রান্তিলগ্নে একজন শিক্ষক হিসেবে সরকার ঘোষিত ছুটিতে শুধু ঘরে আবদ্ধ না থেকে পাশ্ববর্তী মানুষকে "করোনা" এর ভয়াবহতা তুলে ধরে সচেতনতামূলক কাজ করছি।
পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের সম্মানিত জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে এলাকায় জীবাণুনাশক স্প্রে করা ও জনসাধারণকে মাস্ক পরা ও বার বার সাবান দিয়ে হাত ধুতে পরামর্শ দিচ্ছি । এছাড়া, মোবাইলসহ অন্যান্য মাধ্যমে স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ করে বাড়িতে বসে পড়াশোনার নির্দেশনা দিচ্ছি এবং সংসদ টিভিতে প্রচারিত নির্ধারিত ক্লাসগুলো দেখে ঘরে বসে পাঠগ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছি।
এ মুহূর্তে সৃষ্টিকর্তার কাছে একজন শিক্ষক হিসেবে প্রার্থনা তিনি যেনো এই মহামারি থেকে আমাদের রক্ষা করেন। আমরা দ্রুত যেনো আমাদের স্কুল আঙিনায় ফিরে আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদানে ফিরতে পারি। সব স্কুল আঙিনা যেনো দ্রুত নিষ্পাপ শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়।
মহিশালবাড়ী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, গোদাগাড়ী, রাজশাহী এর প্রধান শিক্ষক মোঃ হায়দার আলী বলেন, এর আগে এধরনের ছুটি পাইনি খুব বোরিং লাগছে , শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে খারাপ লাগছে, সব কিছু মেনে নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে মোবাইলে কথা বলছি, সংসদ টিভিতে ক্লাস গুলি দেখতে এবং প্রদত্ত বাড়ীর কাজগুলি করে স্কুলের বিষয়ভিক্তিক স্যার জমা দিতে হবে সেটা বলা হয়েছে।
মাঝে মাঝে প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছি, বেশী বেশী খবর দেখচ্ছি, বই পড়ছি, গরীবদের সাহায্য করছি, সরকারের পাশাপাশি আমাদের রাজশাহী ১ আসনের এমপি আলহাজ্ব ওমর ফারুক চৌধুরী গতকাল গরীবদের খাবারের জন্য নিজে ১লাখ টাকা দিয়েছেন গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল ইসলাম সরকারের মাধ্যমে তহবিল গঠন করেছেন সেখানে যে যেভাবে দান করবেন করতে পারেন ওখানে দান করার জন্য শিক্ষকদের ফোন করে বলা হচ্ছে, নামাজসহ ধর্মীয় কাজ বেশী বেশী করা হচ্ছে। আল্লাহকে বেশী বেশীস্মরণ করচ্ছি, দান করছি, মানুষ ফোন করে দেশের অবস্থা, সমাজের, এলাকার অবস্থা, করোনা অবস্থা জানতে যাচ্ছেন, এঅবস্থা কতদিন থাকবে, আমরা গরীব আমাদের কি হবে, মাঝে মধ্যে ছাত্রী, অভিভাবক রিং করছেন, ফেসবুক চালাচ্ছি, প্রধান মন্ত্রীর বক্তব্যের পর এলাকার মানুষের উৎকন্ঠা কমে গেছে।
পরিবারের সদস্যদের এর আগে এভাবে এতবেশী সময় দিতে পারিনি এজন্য তারাও খুশি, ছোট খাট পারিবারিক কাজগুলি করা হচ্ছে । প্রতিষ্ঠান প্রধান, শিক্ষক, সাবেক শিক্ষক নেতা, হুজুরদের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হচ্ছ। এলাকার ডে লেবার, গরীব, অটোচালক, টলি চালকদেরও কিছু কিছু খোঁজ নেয়া হচ্ছে। বেশী বেশী নিউজ করার সুযোগ পাচ্ছি। এ ভাবেই সময় কেটে যাচ্ছে।