কেমন আছেন নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা
নিউজ ডেস্ক।।
মহামারি করোনার মারাত্মক প্রভাব পড়েছে সব পেশার মানুষের ওপর। বেশি বিপাকে রয়েছেন নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা। করোনার কারণে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় নন-এমপিও শিক্ষকদের বেতন-ভাতা একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে পরিবার নিয়ে অর্থকষ্টে দিন পার করছেন তারা। একই অবস্থা সুনামগঞ্জের ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের নন-এমপিও ২৯৬ জন শিক্ষক-কর্মচারীর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুনামগঞ্জের ৩৭টি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়নি। করোনার কারণে বন্ধ থাকায় গত ফেব্রুয়ারি থেকে বেতন-ভাতা পাননি এসব প্রতিষ্ঠানের ২৯৬ জন শিক্ষক-কর্মচারী। এই অবস্থায় পরিবার-পরিজন নিয়ে ভীষণ কষ্টে রয়েছেন তারা।
গত বুধবার একজন কলেজ শিক্ষক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করে এলাকার কলেজে এসে চাকরি নিয়েছি। আশা ছিল কলেজটি এমপিওভুক্ত হবে। এখানেই জীবন কাটিয়ে দিব। এখন চাকরির বয়স প্রায় শেষ। কিন্তু কলেজটি এখনও এমপিওভুক্ত হয়নি। কলেজ থেকে যে সামান্য বেতন দেওয়া হতো গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে তাও পাইনি। সংসারে বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান রয়েছে। কয়েকটি টিউশনি ছিল, সেগুলোও এখন নেই। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা জানিয়েছেন, স্কুল-কলেজ বন্ধ এখন পড়াতে হবে না। প্রধানমন্ত্রীর করোনাকালীন সহায়তার পাঁচ হাজার টাকা ছাড়া কোনো উপার্জন নেই। অন্য কাজও করতে পারছি না, পরিবারের সদস্যদের জীবন বাঁচাই কীভাবে? এসব কথা কাউকে বলাও যাচ্ছে না। তার দাবি, সুনামগঞ্জের নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষক-কর্মচারীর অবস্থা তার মতোই।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমার উত্তরপাড়ের বৈশারপাড়ে মতিউর রহমান কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান। ২০১১ সাল থেকে রাজনীতিবিদ মতিউর রহমান এলাকাবাসীর সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠানটি চালিয়ে আসছেন। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত না হওয়ায় ভীষণ বিপাকে পড়েছেন কলেজের নয়জন শিক্ষক ও একজন নৈশপ্রহরী। কলেজের একজন শিক্ষক বলেন, এমন কষ্টের মধ্যে পড়েছি, যা কাউকে বলার মতো নয়। ডিসেম্বরের পর আর বেতন পাইনি। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া পাঁচ হাজার টাকা ছাড়া এই ১০ মাসে আমার কোনো আয় নেই। কলেজের অধ্যক্ষ মশিউর রহমান বলেন, কলেজের ৩০০ শিক্ষার্থী বেতন দিচ্ছে না। করোনাকালে পাঠদান বন্ধ থাকায় বেতনের জন্য চাপও দেওয়া যাচ্ছে না। এখন ছাত্র ভর্তির কিছু টাকা পাওয়া গেছে। কলেজ পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বেতন পরিশোধ করা হবে।
কেবল মতিউর রহমান কলেজ নয়, জেলার আরও পাঁচটি নন-এমপিও কলেজ, ২১টি মাধ্যমিক স্কুল ও ১০টি মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীরা অর্থকষ্টে রয়েছেন।শান্তিগঞ্জ মডেল উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫২১ জন। এই বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এমপিওভুক্ত থাকায় ১১ শিক্ষক-কর্মচারী করোনাকালে সরকারি অংশের বেতন পেয়েছেন। কিন্তু নবম ও দশম শ্রেণিতে পাঠদানকারী খণ্ডকালীন শিক্ষকরা মার্চ মাসের পর কোনো বেতন পাননি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, আট মাস ধরে বেতন দিচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। আমরাও খণ্ডকালীন শিক্ষকদের কোনো টাকা দিতে পারছি না। অন্য শিক্ষকদেরও বিদ্যালয় অংশের টাকা দেওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে ভীষণ বেকায়দায় পড়েছেন খণ্ডকালীন শিক্ষকরা।
সুনামগঞ্জ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, সুনামগঞ্জে ২১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১০টি মাদ্রাসা ও ছয়টি কলেজ এমপিওভুক্ত হওয়ার বাকি রয়েছে। করোনাকালে এসব প্রতিষ্ঠানের ২৯৬ জনের মতো শিক্ষক-কর্মচারী অর্থকষ্টে রয়েছেন। তাদের আপৎকালীন সহযোগিতা করা প্রয়োজন।