করোনা থাকবে শিক্ষা ও চলবে
করোনায় বিপর্যস্ত পুরো পৃথিবী। এর ভয়াল থাবায় আজ লন্ডভন্ড দেশের শিক্ষাব্যবস্থা৷ স্মরণকালের ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটে যাচ্ছে শিক্ষা খাতে। সামনে কতদূর গিয়ে এর দৌরাত্ম থামবে তা অজানা। করোনা আছে, করোনা থাকবে। এটা মাথায় রেখেই আমাদেরকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। আজ প্রায় ৫ মাস ধরে বন্ধ আছে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এভাবে আরো বন্ধ থাকলে শিক্ষার মেরুদণ্ড ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে। তাই আর ছুটি বাড়ানো নয়। গতানুগতিক শিক্ষার যে পদ্ধতি প্রচলিত আছে তা পরিবর্তন করতে হবে। বদলাতে হবে এর সার্বিক ব্যবস্থাপনা। সেক্ষেত্রে করোনা ঝুঁকি মোকাবিলা করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস নেয়ার জন্য আমার কিছু প্রস্তাব নিম্নে তুলে ধরা হলো।
১. সিলেবাস ছোট ও সাবজেক্ট কমাতে হবে। কারন, করোনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস নিতে হলে বেশি সাবজেক্ট ও বড় সিলেবাস সমস্যা হয়ে দাড়াবে।
২. পরীক্ষা/ মূল্যায়ণ পদ্ধতির পরিবর্তন করতে হবে। রচনামূলক লিখিত পদ্ধতির পরিবর্তে সংক্ষিপ্ত এমসিকিউ পদ্ধতি চালু করতে হবে। মোট নম্বরের অর্ধেকটা ক্লাস মূল্যায়ণের জন্য নির্ধারণ করতে হবে।
৩. কেন্দ্রীয় পরীক্ষার সময় প্রতিটা প্রতিষ্ঠান ই একেকটা পরীক্ষা কেন্দ্র হবে। পরীক্ষা নেয়ার দায়িত্ব পালন করবেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। মাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন অন্য প্রতিষ্ঠান প্রধানরা।
৪. প্রতিটা প্রতিষ্ঠান তাদের ছাত্র সংখ্যা অনুযায়ী সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ক্লাস নেয়ার জন্য যে অবকাঠামো প্রয়োজন তা নিজ দায়িত্বে গড়ে তুলবে। এ ক্ষেত্রে সরকার প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তুলতে সহায্য করবে। কোন প্রতিষ্ঠানে যদি ছাত্র সংকুলান না হয় তাহল পার্শ্ববর্তী যেসব প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংখ্যা কম সেসব প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সমন্বয় করতে হবে।
৫. প্রতিটা প্রতিষ্ঠানের প্রবেশ মুখে হাত পা ধোয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখতে হব। প্রতিষ্ঠানে ঢোকার পূর্বে শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকতে হবে। প্রত্যেক শিক্ষক, ছাত্র/ ছাত্রীকে বাধ্যতামূলক ভাবে মাস্ক পড়তে হবে। শ্রেণি কক্ষে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে পাঠদান নিশ্চিত করতে হবে।
৬. ছাত্র, ছাত্রী ও অভিভাবকদের মধ্যে ব্যপকভাবে স্বাস্থ্য সচেতনতা মূলক প্রচারণা চালাতে হবে।
৭. প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে একাধিক শিফট চালু করতে হবে।
৮. অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।
৯. প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে একজন প্রাথমিক চিকিৎসক/ নার্স নিয়োগ দিতে হবে।
১০.অনলাইন শিক্ষার উপর জোর দিতে হবে। প্রয়োজনে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য একটি ফ্রী ইন্টারনেট সিমের ব্যবস্থা করতে হবে।
আশা করি এসব ব্যবস্থা গ্রহণ করলে করোনার সম্ভাব্য আক্রমণ মোকাবিলা করে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া সম্ভব।
লেখকঃ
মুহাম্মদ জসিম উদ্দীন
প্রভাষক,
জিরাইল আজিজিয়া ফাজিল মাদরাসা
বাকেরগঞ্জ, বরিশাল।